কুরবানি কাদের উপর ফরজ | কুরবানী ওয়াজিব হওয়ার শর্ত কয়টি
কুরবানি কাদের উপর ফরজ | ২০২৫ সালের হজ ও কুরবানির বিধান সম্পর্কে ইসলামিক দৃষ্টিভঙ্গি: প্রতি বছর ঈদুল আযহা এলেই মুসলিমদের মাঝে এক সাধারণ প্রশ্ন উঠে—কুরবানি কাদের উপর ফরজ? কুরবানি দেওয়া কি ফরজ, নাকি সুন্নত? ইসলামিক শরিয়তের আলোকে এসব প্রশ্নের সঠিক উত্তর জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে ২০২৫ সালের প্রেক্ষাপটে যখন আর্থিক সীমারেখা, বাজারদর ও জীবনযাত্রার ব্যয় অনেক পরিবর্তিত হয়েছে। কুরবানী ওয়াজিব হওয়ার শর্ত কয়টি, কত টাকা থাকলে কুরবানী ওয়াজিব ২০২৫ সালে, নেসাব পরিমাণ সম্পদ কত, ঈদুল আযহায় কাদের কোরবানি দিতে হয়—এসব প্রশ্নের উত্তর অনেকেই খুঁজে থাকেন।
আরো পড়ঃ বাংলাদেশে ঈদ কবে ২০২৫
এই ব্লগে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করবো—কুরবানী কার উপর ফরজ, বিশেষ করে প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ মস্তিষ্ক ও মুকিম ব্যক্তি যার কাছে নেসাব পরিমাণ সম্পদ রয়েছে (যার বর্তমান মূল্য আনুমানিক ৫৫ হাজার টাকা), তার ওপর কুরবানি ওয়াজিব। অনেকেই জানতে চান, বাচ্চাদের উপর কুরবানী ফরজ? অথবা কোরআন অনুযায়ী কুরবানী ফরজ কি? এসব প্রশ্নের উত্তর ইসলামিক ফিকহ ও নির্ভরযোগ্য উৎস অনুযায়ী দেয়া হবে।
আরো পড়ঃ গার্মেন্টস ঈদের ছুটি ২০২৫
কুরবানি কাদের উপর ফরজ
কুরবানি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। ইসলাম ধর্মে নির্দিষ্ট কিছু শর্ত পূরণ করলে মুসলমানের উপর কুরবানি ওয়াজিব বা ফরজ হয়। নিচে ধাপে ধাপে বোঝানো হলো—
১. প্রাপ্তবয়স্ক মুসলমান হতে হবেঃ
যে ছেলে বা মেয়ে বয়সে প্রাপ্তবয়স্ক (বালেগ) হয়েছে, তার ওপর কুরবানি ওয়াজিব হতে পারে। বাচ্চাদের ওপর কুরবানি ফরজ নয়।
২. সুস্থ মস্তিষ্কের অধিকারী হতে হবেঃ
যদি কেউ পাগল বা মানসিকভাবে অস্বাভাবিক হয়, তাহলে তার ওপর কুরবানি ওয়াজিব হয় না।
৩. মুসলিম হওয়া আবশ্যকঃ
কুরবানি কেবলমাত্র মুসলমানদের জন্য ফরজ। অমুসলিমের উপর কুরবানির কোনো বিধান নেই।
৪. মুকিম (নিজ এলাকায় অবস্থানকারী) হতে হবেঃ
ভ্রমণরত ব্যক্তি (মুসাফির) কুরবানি দিতে বাধ্য নয়। তবে সে চাইলে নফল হিসেবে কুরবানি দিতে পারে।
৫. নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হতে হবেঃ
যার কাছে প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ থাকে – যেমন:
- অলংকার,
- টাকা-পয়সা,
- ব্যবসার মাল,
- প্রয়োজনের অতিরিক্ত আসবাবপত্র,
- ফাঁকা জমি বা বাড়ি —
এসব যদি মিলিয়ে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার সমমূল্য হয় (২০২৫ সালের আনুমানিক হিসাবে ৫৫ হাজার টাকা), তাহলে তার ওপর কুরবানি ওয়াজিব।
আরো পড়ুনঃ ঈদুল আজহার তারিখ আরব আমিরাত
৬. ঈদের সময়কালীন সম্পদের মালিক হতে হবেঃ
১০ জিলহজ ফজরের সময় থেকে ১২ জিলহজ সন্ধ্যা পর্যন্ত সময়ের মধ্যে যদি কারো কাছে নেসাব পরিমাণ সম্পদ থাকে, তবে তার ওপর কুরবানি ফরজ হয়।
৭. প্রতি ব্যক্তির জন্য আলাদা কুরবানিঃ
একই পরিবারে একাধিক সদস্যের ওপর যদি কুরবানি ওয়াজিব হয়, তাহলে প্রত্যেককেই আলাদা কোরবানি করতে হবে। একটি পশু সবার জন্য যথেষ্ট নয়।
৮. অন্যের পক্ষ থেকে কুরবানি ফরজ নয়ঃ
স্বামী-স্ত্রী, সন্তান বা পিতামাতার পক্ষ থেকে কুরবানি করা ওয়াজিব নয়, যদি না তারা নিজেরা নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হন।
৯. একবার পশু কেনা মানেই কুরবানি জরুরিঃ
যার ওপর কুরবানি ওয়াজিব নয়, কিন্তু সে কুরবানির নিয়তে পশু কিনে ফেলে, তাহলে তার ওপর ওই পশু কুরবানি করা আবশ্যক হয়ে যায়।
১০. কুরবানি না করলে বিকল্প ব্যবস্থাঃ
যার ওপর কুরবানি ওয়াজিব কিন্তু কুরবানি করেনি, সে কুরবানির দিন চলে যাওয়ার পর একটি ছাগলের মূল্য সদকা দিতে বাধ্য।
আরও পড়ঃ ঈদুল আযহারের সুন্নত আমল কী কী? ঈদের দিনের আমল
কুরবানী ওয়াজিব হওয়ার শর্ত কয়টি
ইসলামে কুরবানী একটি মহান ইবাদত। তবে তা সবার উপর ওয়াজিব নয়। কুরবানী ওয়াজিব হওয়ার জন্য কিছু নির্দিষ্ট শর্ত রয়েছে। নিচে ৬টি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত তুলে ধরা হলো
১ মুসলমান হতে হবেঃ
শুধু মুসলমানদের ওপর কুরবানী ওয়াজিব। অমুসলিমদের ওপর কুরবানির কোনো বিধান নেই
২ স্বাধীন হতে হবেঃ
যে ব্যক্তি অন্যের দাস বা দাসী, তার ওপর কুরবানী ওয়াজিব নয়। স্বাধীন ব্যক্তি হলে তবেই কুরবানী ওয়াজিব হবে
৩ মুকিম নিজ এলাকায় অবস্থানকারী হতে হবেঃ
যিনি মুসাফির অর্থাৎ ভ্রমণে আছেন ৭৮ কিলোমিটার বা তার বেশি দূরত্বে, তার ওপর কুরবানী ওয়াজিব নয়। নিজ এলাকায় অবস্থানকারী মুকিম ব্যক্তি হলে তবেই কুরবানী ওয়াজিব হয়
৪ প্রাপ্তবয়স্ক বালেগ হতে হবে
ছোট বাচ্চাদের ওপর কুরবানী ওয়াজিব নয়। প্রাপ্তবয়স্ক হলেই এ বিধান প্রযোজ্য হয়
৫ সুস্থ মস্তিষ্কের অধিকারী হতে হবেঃ
যে ব্যক্তি পাগল বা মানসিকভাবে অক্ষম, তার ওপর কুরবানী ওয়াজিব হয় না
৬ নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হতে হবেঃ
নেসাব পরিমাণ সম্পদ যার কাছে থাকবে, তার ওপর কুরবানী ওয়াজিব। নেসাব মানে হলো
- সোনা সাত দশমিক পাঁচ ভরি
- রূপা বায়ান্ন দশমিক পাঁচ ভরি
- অথবা এর সমমূল্যের টাকা বা সম্পদ দুই হাজার পঁচিশ সালে আনুমানিক তেইশ হাজার ছয় শত পঁচিশ টাকা
এ সম্পদ প্রয়োজনের অতিরিক্ত হতে হবে। যেমন
- অলংকার
- অতিরিক্ত জমি বাড়ি
- টাকা পয়সা
- ব্যবসার পণ্য
- অতিরিক্ত আসবাবপত্র
কুরবানীর সময়কাল হলো দশ জিলহজ ফজর থেকে বারো জিলহজ সূর্যাস্ত পর্যন্ত। কুরবানীর নেসাব পুরো বছর থাকা জরুরি নয় বরং ঐ তিন দিনের মধ্যে যেকোনো একদিন থাকলেই কুরবানী ওয়াজিব হবে।
২০২৫ সালের প্রেক্ষাপটে “কুরবানি কাদের উপর ফরজ” প্রশ্নটি আগের চেয়ে অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। বাজারমূল্য, নেসাবের হার এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বিবেচনায় নিয়ে কুরবানী দেওয়ার বিষয়ে ইসলামী জ্ঞানের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া আজ জরুরি। মনে রাখতে হবে, কুরবানি দেওয়া কি ফরজ – এ প্রশ্নের উত্তর নির্ভর করে কিছু গুরুত্বপূর্ণ শর্ত পূরণের ওপর। যেমন—একজন মুসলমান হওয়া, প্রাপ্তবয়স্ক ও সুস্থ মস্তিষ্কের অধিকারী হওয়া, মুকিম হওয়া এবং নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়া।
২০২৫ সালে আনুমানিক ৫৫ হাজার টাকা বা তার সমপরিমাণ প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদের মালিক হলে কুরবানী ওয়াজিব হয়। অনেকে জানতে চান—বাচ্চাদের উপর কুরবানী ফরজ? উত্তর হলো না; কারণ তারা বালেগ নয়। আবার কেউ যদি ভ্রমণরত হন, তার জন্য কুরবানি সুন্নত হতে পারে কিন্তু ফরজ নয়।
এছাড়াও, কোরআন অনুযায়ী কুরবানী ফরজ কি—এ প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে: হাদীস ও ইজমা অনুসারে নির্দিষ্ট কিছু শর্ত পূরণকারী মুসলিমদের ওপর এটি ওয়াজিব। কুরবানী ওয়াজিব হওয়ার শর্ত কয়টি?—এ প্রশ্নের জবাবে আমরা পেয়েছি কমপক্ষে ৬-১০টি নির্ভরযোগ্য শর্ত, যেগুলোর আলোকে আপনি নিশ্চিত হতে পারবেন ঈদুল আযহায় কাদের কোরবানি দিতে হয়।
সুতরাং, যাদের ওপর কোরবানি ওয়াজিব, তাদের উচিত আগেই নিজ নিজ আর্থিক অবস্থা যাচাই করে প্রস্তুতি গ্রহণ করা। এটি কেবল একটি ধর্মীয় দায়িত্বই নয়, বরং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মাধ্যম।
তাই কুরবানি দেয়া কার উপর ফরজ এবং কত টাকা থাকলে কুরবানী ওয়াজিব ২০২৫—এসব প্রশ্নের সঠিক জবাব জানার মাধ্যমে আপনার ইবাদত হবে পূর্ণতা লাভকারী, সচেতন ও নৈতিকভাবে সঠিক। আল্লাহ আমাদের সবাইকে এই মহান ইবাদতের যোগ্য করে তুলুন—আমিন।
সরকারি/বেসরকারি ছুটির তালিকা দেখ
ডিসেম্বর মাসের ছুটির তালিকা ২০২৫
নভেম্বর মাসের ছুটির তালিকা ২০২৫
অক্টোবর মাসের ছুটির তালিকা ২০২৫
সেপ্টেম্বর মাসের ছুটির তালিকা ২০২৫
এপ্রিল মাসের ছুটির তালিকা ২০২৫
ফেব্রুয়ারি মাসের ছুটির তালিকা ২০২৫
জানুয়ারি মাসের ছুটির তালিকা ২০২৫
